অ্যানিসোমেট্রোপিয়া (Anisometropia) পূর্ণাঙ্গ ধারণা

 

অ্যানিসোমেট্রোপিয়া (Anisometropia) পূর্ণাঙ্গ ধারণা

অ্যানিসোমেট্রোপিয়া কী?

যখন দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি বা চশমার পাওয়ার সমান হয় না, তখন সেটিকে অ্যানিসোমেট্রোপিয়া বলা হয়। এক চোখের ছবি পরিষ্কার আরেক চোখের ছবি তুলনামূলক ঝাপসা হলে মস্তিষ্কে দুই রকম সিগন্যাল যায়, ফলে দৃষ্টিতে অসুবিধা হয়।

অ্যানিসোমেট্রোপিয়ার ধরন

  • মায়োপিক অ্যানিসোমেট্রোপিয়া: দুই চোখেই মাইনাস পাওয়ার থাকে, তবে এক চোখে বেশি।
  • হাইপারমেট্রোপিক অ্যানিসোমেট্রোপিয়া: দুই চোখেই প্লাস পাওয়ার থাকে, তবে অসম।
  • মিক্সড অ্যানিসোমেট্রোপিয়া: এক চোখে মায়োপিয়া, অন্য চোখে হাইপারমেট্রোপিয়া।
  • অ্যাস্টিগম্যাটিক অ্যানিসোমেট্রোপিয়া: দুই চোখের অ্যাস্টিগমাটিজম ভিন্ন রকম।
  • হালকা (Mild): পার্থক্য সাধারণত ০.৫০–১.০০ ডাইঅপ্টার।
  • মাঝারি (Moderate): পার্থক্য ১.০০–৩.০০ ডাইঅপ্টার।
  • গুরুতর (Severe): পার্থক্য ৩.০০ ডাইঅপ্টারের বেশি।

কেন হয়?

  • শিশুদের চোখের স্বাভাবিক বিকাশে পার্থক্য।
  • পরিবারে চশমা পরার ইতিহাস থাকলে।
  • চোখের আঘাত বা সার্জারি হওয়ার পর।
  • কর্নিয়া বা লেন্সের রোগ যেমন – কেরাটোকোনাস, ছানি ইত্যাদি।

লক্ষণ

  • চোখে চাপ, মাথাব্যথা, চোখে জ্বালা।
  • এক চোখ ঝাপসা আরেক চোখ তুলনামূলক পরিষ্কার দেখা।
  • দুই চোখের ছবি একরকম না লাগা।
  • দূরত্ব বুঝতে (Depth perception) সমস্যা।
  • শিশুরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাতে পারে।
  • প্রয়োজনে এক চোখ ঢেকে পড়তে চাওয়া।

দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব

  • স্কুলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া।
  • খেলাধুলায় সমন্বয় ঠিক না থাকা।
  • গাড়ি চালানো বা কম্পিউটার ব্যবহারে সমস্যা।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে – এক চোখ অলস হয়ে যাওয়া (অ্যাম্ব্লিওপিয়া)।

শিশু বনাম প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পার্থক্য

  • শিশু: চোখের বৃদ্ধি চলমান থাকায় পার্থক্য থাকলে মস্তিষ্ক দুর্বল চোখকে উপেক্ষা করতে শুরু করে, ফলে Lazy eye তৈরি হয়।
  • প্রাপ্তবয়স্ক: চোখের পাওয়ার স্থির থাকে, তবে ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা বা ডাবল ভিশন সমস্যা বাড়ায়।

ঝুঁকি বাড়ায় যেসব বিষয়

  • পরিবারে দৃষ্টিজনিত সমস্যার ইতিহাস।
  • প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্ম।
  • আগে চোখে আঘাত বা অপারেশন হওয়া।
  • বয়সজনিত ছানি বা কর্নিয়ার অসুখ।

চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?

  • এক চোখ স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া (Lazy eye)।
  • দুই চোখ একসাথে কাজ করতে না পারা।
  • শিশুদের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ও আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কাজকর্মের মান কমে যাওয়া।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • অ্যানিসোমেট্রোপিয়া খুব সাধারণ হলেও অনেক সময় ধরা পড়ে না।
  • ১ ডাইঅপ্টারের বেশি পার্থক্য হলে চোখে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
  • প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে এর জটিলতা অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post